সমাজ উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশিষ্ট নারীনেত্রী অ্যাডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত। বুধবার চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তাকে সম্মাননা ও সনদ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী রওশন আক্তার, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি চেমনআরা তৈয়ব, এডিশনাল ডিআইজি মো. জাকির হোসেন খান।
সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ এনডিসি। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভাগের অন্য কর্মকর্তারা এবং জেলা প্রশাসকরা উপস্থিত ছিলেন।
জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ২০১৯ সালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৃণমূলের সফল নারীদের সম্মাননা জানানোর পদক্ষেপ হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার ৫৪ জনের মধ্যে ৫টি ক্যাটাগরিতে ৫ জনকে বিভাগের সেরা জয়িতা নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে ‘সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী’ ক্যাটাগরিতে বিচারকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তে নিশাত শ্রেষ্ঠ বিবেচিত হন। এর আগেও তিনি একই ক্যাটাগরিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছিলেন।
আইন পেশায় নিযুক্ত নিশাত সমাজসেবী ও সাপ্তাহিক গতিপথ সম্পাদক, টিভি সাংবাদিকতায় সালমা-সোবহান ফেলো। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অবহেলিত নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। পারিবারিক কলহে অসহায় নারীদের আইনি সহায়তা প্রদান, দরিদ্র নারীদের ভাগ্য পরিবর্তনে তার ভূমিকা অসামান্য।
২০১৪ সালে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সদরের সুহিলপুর ইউনিয়নের ঋষি সম্প্রদায়ের অবহেলিত নারীদের জীবন বদলে দিতে তার গৃহীত পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়। সেখানে স্থায়ী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ওই পাড়ার ৩৭৫টি পরিবারের প্রত্যেকটি থেকেই একজন করে প্রশিক্ষিত করা হয়। তাদের মধ্যে নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ৫০ জনেরও বেশি নারী নিজের জীবন বদলাতে সক্ষম হন।
এছাড়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে এক হাজারেরও বেশি নারী প্রশিক্ষিত হয়েছেন তাসলিমা সুলতানার উদ্যোগে। জাতিসংঘের ইউএন উইম্যান এবং ইউএন সিডিএফ প্রতিনিধি দল ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিনিধি দল তার এসব কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
নারী উন্নয়ন ফোরামের প্রকল্প ‘অপারিজতা’র জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে উদ্ভাবনী পুরস্কার অর্জন করেন। প্রতিবন্ধীদের সেবায়ও দীর্ঘ সময় ধরে নিয়োজিত রয়েছেন এই নারীনেত্রী। সুইড বাংলাদেশ পরিচালিত আসমাতুন্নেছা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ১৫ বছর প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বর্তমানে সুইড বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাধারণ সম্পাদক।
এছাড়াও তিনি ড্রিম ফর ডিসঅ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশন, ড্রিম ফর ডিসঅ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশন হুইলচেয়ার ক্রিকেট টিম,ড্রিম ফর ডিসঅ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশন ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টিমের উপদেষ্টা।
অ্যাডভোকেট নিশাত জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৮৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারীদের ক্রীড়া বিকাশে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। তিনি নারী সাংবাদিকতায় ফেলোশিপ প্রাপ্ত সালমা সোবহান ফেলোশিপ (ই-মিডিয়া) ব্যাচ-২০০৭ অর্জন করেন।
নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গত বছরের ৮ মার্চ জাতীয়ভাবে দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড প্রদত্ত ‘আনস্ট্যাপেবল ওম্যান অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। নানা ক্ষেত্রে সাফল্য জনক কর্মকাণ্ডের জন্য নিশাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ২০০৩ সালে ভারত এবং ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, পার্থ, সিডনি ও সিঙ্গাপুর সফর করেন তিনি।
সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও মেলবোর্ন সফর করেন। স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণে ২০১৬ সালে গভর্ন্যান্স প্রজেক্টের আওতায় শ্রীলংকা ও ভারতের কেরালা সফরে যান।
Leave a Reply