মহেশখালী প্রতিনিধি
পদ্মা সেতুর পর গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির নতুন আরেক স্বপ্নও সত্যি করলো বাংলাদেশ। মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেলে আজ মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো সকাল ১০টা ২০ মিনিটে নোঙর করলো পানামার জাহাজ ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার ‘পেলাভুবন সিলেগন’ বন্দর থেকে জাহাজটি বাংলাদেশের উদ্দেশে ২২ ডিসেম্বর রওনা দেয়। গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রবেশপথে এ জন্য ছয়টি বয়া (নির্দেশক) বসানো হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে ১৬ মিটার ড্রাফট ও ২৫০ মিটার চওড়া একটি চ্যানেলও। বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করে চ্যানেলে প্রবেশ করে মাতারবাড়ীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে ভিড়ছে জাহাজটি। কাশিমা ও নিগাতা নামে জাপানের দুটি বন্দরের আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে মাতারবাড়ীর এই গভীর সমুদ্রবন্দর। ১৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে দুই ধাপে। প্রকল্পটির কাজ ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনই তাতে অস্থায়ীভাবে নোঙর করছে বড় জাহাজ। চট্টগ্রাম বন্দরে এখন সাড়ে ৯ মিটারের অধিক গভীরতার কোনো জাহাজ নোঙর করতে পারে না। কিন্তু এই গভীর সমুদ্রবন্দরে ভিড়তে পারবে ১৮ মিটার গভীরতার জাহাজও।
মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের কাজ চলার মধ্যেই সেখানে ভিড়তে যাচ্ছে বিদেশি জাহাজ। এটি একটি জেনারেল কার্গো শিপ। এর ড্রাফট (জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতা) সাড়ে পাঁচ মিটার। পানামার পতাকাবাহী এই জাহাজটি নির্মিত হয়েছে ২০০৯ সালে। এটি ১২০ মিটার লম্বা ও নয় হাজার ৬৮০ টন ওজন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন।
মাতারবাড়ীতে নতুন এই গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করে এখন শুরু হয়েছে ফিজিক্যাল ওয়ার্ক। এ জন্য ১৬ মিটার ড্রাফট ও ২৫০ মিটার চওড়া একটি চ্যানেল নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে ইতোমধ্যে। অথচ মহাজোট ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর সোনাদিয়াতেই দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল। এরপর ‘সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ আইন’-এর খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে সংযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠন করা হয় কমিটিও। কিন্তু গত এক দশকে আর কোনো অগ্রগতি নেই। এবারকার প্রস্তাবিত বাজেটেও সোনাদিয়ার জন্য রাখা হয়নি কোনো বরাদ্দ। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রকে সামনে রেখে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের বিকল্প পথটিতে অগ্রসর হতে থাকে মন্ত্রণালয়। তাই খুব অল্প সময়ে বাস্তব রূপ পেতে যাচ্ছে এই প্রকল্পটি।
কোল পাওয়ার জেনারেশন প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ দৈনিক আমার সংবাদকে জানান, জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প। মাতারবাড়ীতে প্রথমে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য কৃত্রিম চ্যানেল খনন করে। আজ এই মাদার ভেসেল নোঙরের মাধ্যমে নতুন দিগন্ত সুচনা করলো বাংলাদেশ। ২০২৫ সাল নাগাত সম্পূর্নরুপে প্রস্তুত হবে এই সমুদ্রবন্দর।
Leave a Reply